Thursday, September 1, 2011

ধর্মনিরপেক্ষ ভারত : কলকাতার বালিকা বিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি নেই!


ধর্মনিরপেক্ষ ভারত : কলকাতার বালিকা বিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি নেই!
শফিকুল ইসলাম, কলকাতা
ধর্মনিরপেক্ষ দেশ; পবিত্র ঈদের দিনেও ছুটি নেই স্কুলে। মধ্য কলকাতার শেঠ সুরজমল জালান বালিকা বিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্ত। ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ছুটির তালিকায় নেই ঈদুল ফিতর।
মধ্য কলকাতার সংগঠন ‘সেক্যুলার সিটিজেন ফোরাম’ এর প্রতিবাদে সরব হয়েছে। ছুটির আর্জি জানানো হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে। ছুটি পাওয়া না গেলে প্রতিবাদে স্কুলের সামনে দিনভর চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ অবরুদ্ধ করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন সিটিজেনস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সিদ্দিকী। এতেও ভাবান্তর নেই স্কুল কর্তৃপক্ষের। তাদের চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা, ‘মুসলিম ছাত্রীরা ক্লাসে না এলেও কিছু যায়-আসে না। তাদের আসার বাধ্যবাধকতা নেই।’
এদিকে কলকাতার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ঈদের আগে বাজার জমজমাট। বেলগাছিয়া, রাজাবাজার, পার্কসার্কাস, রিপন স্ট্রিট, হাজী মোহাম্মদ মহসীন স্কোয়ার থেকে শুরু করে খিদিরপুর, মেটিয়াবরুজ সর্বত্র ভিড়ে ঠাসা। রকমারি সেমাই, লাচ্ছার পসরা সাজিয়ে রাস্তার দু’পাশে দেখার মতো ভিড় জমেছে। গত বছরের তুলনায় সেমাই ও লাচ্ছার দামও বেশি। কিলোপ্রতি ৫০ টাকা থেকে শুরু। গুণাগুণের বিচারে সেমাইয়ের দাম প্রতি কিলো বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। আবার না খোদা মসজিদ চত্বরে লাচ্ছা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৫০ টাকা থেকে ৩৭৫ টাকা পর্যন্ত। রকমারি পাজামা-পাঞ্জাবি কিনতে রবীন্দ্রসরণির (লোয়ার চিত্পুর রোড) দোকানগুলোতে বসার জায়গা নেই। পাল্লা দিয়ে বিক্রি হচ্ছে হরেক রঙের টুপি আর আতর। মনের মতো জুতো কিনতে কলেজ স্ট্রিট, কলুটোলা, রবীন্দ্রসরণি, হাতিবাগান, শ্যামবাজার, রাজাবাজার, শিয়ালদহ থেকে শুরু করে দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, মেটিয়াবরুজ—সর্বত্র ভিড়ে ঠাসা।
আগামীকাল ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা। খুশির ঈদে শুধু কলকাতা নয়, কেনাকাটায় মেতে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হাওড়া ও হুগলি জেলার সদর ও মহকুমা শহর। গ্রামও পিছিয়ে নেই। সাজানো হচ্ছে রাস্তা, করা হচ্ছে তোরণ। খবর পাওয়া গেছে কলকাতার মতো দিল্লি, মুম্বাই, হায়দরাবাদ, লক্ষেষ্টৗ, পাটনা, মহীশূর, ব্যাঙ্গালোর, মুরাদাবাদ, মিরাট ও এলাহাবাদ শহরে ভিড় হচ্ছে। পরিধেয় বস্ত্র থেকে আহার্য সেমাই-লাচ্ছা সবই দেদার বিক্রি হয়েছে বা হচ্ছে। তবে সাধ থাকলেও অনেকের মনের মতো জিনিস কেনার সাধ্য নেই, কারণ দাম যে অনেক বেশি!

আপন ঠিকানায় ফিরছে নগরবাসী


আপন ঠিকানায় ফিরছে নগরবাসী : ট্রেন বাস লঞ্চ টার্মিনালে মানুষের স্রোত
কাজী জেবেল

নগরী ছেড়ে ছুটছে মানুষ ট্রেন, বাস, লঞ্চ স্টেশনে। লক্ষ্য আপন ঠিকানায়, স্বজনদের উষ্ণ সান্নিধ্যে ঈদ উদযাপন। যোগাযোগমন্ত্রীর রাস্তা ঠিক হয়ে যাওয়ার অসত্যকথন, যানবাহনে জীবনের ঝুঁকি কোনো কিছুই আটকাতে পারছে না ঘরমুখো নগরবাসীকে। বেহাল দশার কারণে গত ক’দিন বাস কোম্পানিগুলো যাত্রীসঙ্কটে ভুগছিল। তবে গতকাল থেকে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সকাল থেকে গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রী বাড়তে শুরু করেছে। পরিবহন ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, যে হারে যাত্রী বাড়ছে, ঈদের আগের দিন পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। তবুও এবার মানুষ বাসে কম যাচ্ছে। ট্রেন এবং লঞ্চেই বেশি যাচ্ছে।
এবার তুলনামূলকভাবে মানুষ ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন কম। ঢাকাতেই ঈদ করছেন তারা। তবুও গতকাল ট্রেন স্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ঢল ছিল। ট্রেন এবং লঞ্চের ছাদে ও ভেতরে যে যেখানে পারছেন অবস্থান নিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ প্রিয়জনের সঙ্গে উপভোগ করতে বাড়ি ফিরছেন। কোটি মানুষের বসতি ঢাকা নগরী অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে। আজ আরও ফাঁকা হয়ে যাবে। ৯ দিনের ছুটিতে এর আগে গ্রামে চলে যাওয়া মানুষের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে নতুন মানুষ। মৌসুমি আয়ের জন্য যারা শহরে এসেছিলেন, তারাও ফিরে গেছেন গ্রামে।
সোমবার লঞ্চ টার্মিনাল ও ট্রেন স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, পথের সব দুর্ভোগ ও বিপত্তি উপেক্ষা করে শিকড়ের টানে ছুটে যাওয়া মানুষ সকাল থেকেই বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে ভিড় জমাতে শুরু করেন। হাতে-কাঁধে ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে ছুটছেন তারা। ঈদযাত্রীদের পদচারণায় টার্মিনালগুলো যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়। কোথাও দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই। সর্বত্র টইটম্বুর অবস্থা। যে যেভাবে পারছেন, সেভাবেই ছুটছেন। যারা আগাম টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছেন, তারা কিছুটা স্বস্তির মধ্যে ফিরতে পেরেছেন। কিন্তু টিকিট না পাওয়া মানুষদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস, ট্রেন ও লঞ্চের ছাদে চড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। এভাবে যাতায়াতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও গন্তব্যে পৌঁছতে ব্যাকুল সবাই। বাবা-মা, ভাই-বোনসহ স্ত্রী-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উপভোগ করার আকাঙ্ক্ষায় এতসব কষ্টের পরও ঈদযাত্রীদের চেহারায় ক্লান্তির কোনো ছাপ পড়েনি। গতকাল রাজধানীর বাস, লঞ্চ ও ট্রেন টার্মিনাল ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তার বেহাল দশা, কালোবাজারে বিক্রির জন্য টিকিট সংরক্ষণ করে রাখায় বাসযাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় তাদের মনে প্রবল আতঙ্কের দানা বাধে। এসব কারণে গত ক’দিন ধরে যাত্রীসঙ্কটে ভুগছিলেন বাস মালিকরা। তবে গতকাল সকাল থেকে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠন নেতারা। তারা জানিয়েছেন, আজ থেকে (গতকাল) যাত্রী বাড়তে শুরু করেছে। রাত পর্যন্ত প্রচুরসংখ্যক যাত্রী পাওয়া যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা। রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ৩৮টি জেলার বাস চলাচল করে। এ টার্মিনাল থেকে চলাচলকারী বাস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ট্রেজারার মো. কামাল হোসাইন গতকাল দুপুরে আমার দেশকে বলেন, গত ক’দিন যাত্রীর অভাবে গাবতলী বাস টার্মিনাল ফাঁকা ছিল। গতকাল সকাল থেকে যাত্রী বাড়তে শুরু করেছে। সকালে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রী বেশি ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের সব রুটেই যাত্রী বাড়ছে। আশা করছি যাত্রী বাড়ার ধারা ঈদ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। গতকাল শুধুই গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে ৭০০-৮০০ বাস ছাড়ার কথা। যাত্রী বাড়লে বাসের ট্রিপ আরও বাড়ানো হবে।
এদিকে সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালেও যাত্রী বাড়ছে। সায়েদাবাদে বাস শ্রমিকদের অন্যতম একটি সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি মো. আলী রেজা গতকাল আমার দেশকে বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রীদের পদচারণা অনেক বেড়েছে। আগামীকাল যাত্রীসংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রোববার পর্যন্ত পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় অনেক বাস কোম্পানি তাদের নির্ধারিত বাস ছাড়েনি। আজ (সোমবার) শিডিউল অনুযায়ী সব বাস ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীদের চাপ বাড়ায় অতিরিক্ত ট্রিপ দেয়ার চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে। এ শ্রমিক নেতা আরও বলেন, রাস্তার বেহাল দশার কারণে যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে যেতে হবে।
ভোগান্তির শেষ নেই : ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ার আগেই গতকাল রাজধানীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের আগমন ঘটতে থাকে। সময় যতই বাড়ে, মানুষের ভিড় ততই বাড়ছে। দুপুর গড়াতেই তা যেন জনসমুদ্রে রূপ নেয়। যানবাহন স্বল্পতা, বেশি ভাড়া আদায়, যানজট, ট্রেন ও বাস দেরিতে ছাড়া, অতিরিক্ত যাত্রী বহন—এসব কিছু যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে দিয়েছে। এর সঙ্গে পকেটমার, অজ্ঞান ও মলম পার্টির তত্পরতা যাত্রীদের মনে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। এছাড়া রাজধানীর গণপরিবহনগুলো নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ৫-১০ টাকা ঈদ বখশিশ আদায় করছে। অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাবগুলো দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া না দিলে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে চায় না। সদরঘাটের যাত্রীরা পুরনো ঢাকায় যানজটের কবলে পড়েন। সদরঘাটে যাওয়ার পথে জনসন রোড, বাংলাবাজার, পাটুয়াটুলীর সব পথই ছিল যানজটে অবরুদ্ধ। গতকাল সকাল থেকেই এ অবস্থা শুরু হয়। যারা রিকশা বা অটোরিকশা নিয়ে সদরঘাট যাচ্ছিলেন, তাদের অনেকে হেঁটেই রওনা দেন। মিরপুর থেকে আসা আবদুল হাইয়ের হাতে ছিল ব্যাগ আর কাঁধে ছোট বাচ্চা। তিনি বলেন, ‘যথাসময়ে টার্মিনালে পৌঁছাতে না পারলে লঞ্চে জায়গা পাওয়া যাবে না। ক্ষতি হয়ে যাবে।’
এছাড়া সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যানজটের কারণে প্রতিটি বাস গন্তব্যে পৌঁছতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত ৩-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় বেশি লাগছে। এতে বাসের মধ্যে কষ্টে থাকেন যাত্রীরা। মাওয়া-কাওড়াকান্দি ফেরি পারাপার বিঘ্নিত হচ্ছে। সেখানে দুটি ফেরি আটকে পড়েছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটেও বাসের দীর্ঘ লাইন। সেখানেও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে প্রতিটি বাসকে। ঈদ উপলক্ষে কত মানুষ ঢাকা ছাড়ছে—তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে সরকারের পরিবহন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, বেসরকারি বাস ও লঞ্চ মালিক এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, এ ঈদে প্রায় ৭০-৭৫ লাখ মানুষ রাজধানী ছাড়ছে। বেসরকারি সংস্থা সিটিজেন রাইটস মুভমেন্টের এক তথ্যে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ৭০ থেকে ৮০ লাখ। রমজানের প্রথম থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে এসব মানুষ। বিশেষ করে রমজানের শুরুতে ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার আগেভাগে গ্রামে ফিরে গেছে। এরপরও ঈদের আগ মুহূর্তে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ফিরছে বলে জানায় একাধিক সংস্থা।
লঞ্চ মালিকদের দাপটে অসহায় যাত্রীরা : নৌপথে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের যাওয়ার একমাত্র নদীবন্দর সদরঘাট থেকে দেশের ৩৭টি রুটের লঞ্চ চলাচল করে। লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার সহ-সভাপতি লুত্ফর রহমান কিসলু বলেন, স্পেশাল সার্ভিসসহ শতাধিক লঞ্চ ছেড়ে যাবে। সদরঘাটে গতকাল সকাল থেকে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। পন্টুনে আসা মাত্রই লঞ্চগুলোতে হুমড়ি খেয়ে যাত্রীদের উঠতে দেখা যায়। অল্পসংখ্যক লোক কেবিন ও সোফার আগাম টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এর বাইরে বিপুলসংখ্যক যাত্রী লঞ্চের পাটাতনে আসন পাতার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে আবার অনেককে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। যারা পাটাতনে জায়গা পাননি, তারা লঞ্চের ছাদ ও চলাচলের পথে বসেই গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। সদরঘাট ঘুরে দেখা গেছে, দুপুর হতেই বেশিরভাগ লঞ্চে যাত্রী ভরে টইটম্বুর। কোথাও যাত্রীদের বসার জায়গা নেই। এমনকি কেবিনের পথ ও টয়লেটের সামনেও মানুষ বসে আছেন। রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছেন অনেকেই। আরও বেশি যাত্রী নেয়ার আশায় এসব লঞ্চ ছাড়ছে না মালিকপক্ষ। এ নিয়ে অনেক যাত্রী প্রতিবাদ ও হৈচৈ করলে লঞ্চের স্টাফ এবং ঘাট শ্রমিকরা তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চুপ থাকতে বলছে। অন্যথায় লঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়ারও হুমকি দিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লঞ্চের মাস্টার ও ড্রাইভার জানান, দুপুরের আগেই তাদের লঞ্চগুলোয় অতিরিক্ত যাত্রী উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঝেমধ্যে এসে লঞ্চ ছাড়ার তাগাদা দিচ্ছে। কিন্তু মালিকের নির্দেশ না পাওয়ায় লঞ্চ ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। তারা আরও বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে যাত্রাপথে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যাত্রীদের মধ্যে কোনো গোলযোগ বা হাতাহাতি হলে লঞ্চের ভারসাম্য রক্ষা করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। এসব কারণে অতীতে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটেছে। তারপরও টনক নড়ছে না লঞ্চ মালিক ও নৌ কর্তৃপক্ষের। মালিকরা অতিরিক্ত আয় এবং অসাধু কর্মকর্তারা ঘুষের আশায় এসব তোয়াক্কা করছে না। এদিকে গতকালও বেশক’টি লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠায় নির্দিষ্ট সময়ের আগে ছেড়ে দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকা লঞ্চ মালিকদের দাপটের কাছে তারা ছিলেন অসহায়। এমনকি বিআইডব্লিউটিএ ও সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের কর্মকর্তাদের দেখে নেয়ার হুমকিও দেয় এসব লঞ্চ মালিক। এদিকে এবার সদরঘাটে অবাঞ্ছিত ও ভবঘুরে ব্যক্তিদের আনাগোনা এবং পকেটমারদের উত্পাত নেই বলে জানিয়েছেন সদরঘাটের ইজারাদার মো. ইকবাল। তিনি বলেন, যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন, সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।